এম,এ,সুমন মন্ডল : শত বছর ধরে রংপুরের পীরগঞ্জে ঐতিহাসিক রায়পুরের জমিদার বাড়ী পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। অবহেলা,অযত্ম আর কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে একটি প্রত্মত্তাত্ত্বিক নিদর্শন। শত বছর পুর্বে প্রয়াত প্রভাবশালী জমিদার বীরেন বাবু তাঁর সুবিশাল জমিদারী এলাকা ও মনোরম প্রাসাদ ছেড়ে ভারতে চলে যান। আখিরা নদীর তীরবর্তী জমিদার বাড়ি ও বেশ কিছু সম্পত্তি তিনি দান করে যান রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে। বর্তমানে জমিদার বাড়ির ইট খসে যাচ্ছে, ভেঙ্গেচুরে পরিণত হচ্ছে এক ধ্বংস স্তুপে।
পীরগঞ্জ উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের অন্তর্গত উপজেলা সদর থেকে পশ্চিমে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে রায়পুরের জমিদার বাড়ির অবস্থান। ছোট আখিরা নদীর তীরবর্তী উচু ভিটেয় প্রায় ৬ একর জমির উপর শত বছরের ও বেশি সময় পুর্বে গড়ে উঠেছিল জমিদার বীরেন বাবুর এ প্রসাদ। প্রসাদের চারদিকে সারিবদ্ধভাবে লাগানো লম্বা নারিকেল গাছ ও ইট সুরকি দিয়ে নির্মিত আধাপাাকা বিশাল প্রাচীর। আর প্রাচীর সংলগ্ন উল্টো দিকে দু‘টি বড় পুকুর, দক্ষিন-পশ্চিম পার্শ্বে ছিল জমিদার বিরেন বাবুর বিচারালয়। এই বিচারালয়ে তিনি নিজে শুধুমাত্র অপারাধীদের একক উপস্থিতিতে বিচারকার্য ও শাস্তি প্রদান করতেন। বিচার কক্ষ থেকে সামনে থেকে সরু রাস্তা নেমে গেছে ইট বিছানো ঘাট আখিরা নদীতে। এখানেই স্নান করতেন জমিদার পরিবারের লোকজন। পশ্চিম পার্শ্বের অতিথিশালা যা কিছুদিন পূর্বেও রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন ধ্বসে পড়ার আশংকায় ছাত্ররা বসবাস ছেড়ে দিয়েছে। উল্টো দিকের কোনায় জমিদারের বসবার ঘর ও শোবার ঘর ছিল, সেটি ভেঙ্গে এখন ইট সুড়কির স্তুুপে পরিণত হয়েছে। বসার ঘরটি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পুজোমন্ডপ হিসেবে ব্যবহার করলেও এখন তা ছুঁচা চামচিকা আর ইঁদুরের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। এ সকল ভবনের নির্মাণ শৈলী ছিল অত্যন্ত শিল্পকার্য খচিত মনোরম ও চিত্তাকর্ষক। ভবনগুলোর দরজা-জানালা গুলো অনেক মুল্যবান ছিল। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা চুরি গেছে বেশ কিছুদিন আগেই। এখনও চুরি যাচ্ছে ইট-পাথর। জানা গেছে, পরিত্যক্ত এই জমিদার বাড়িতে অনেক মুল্যবান মুর্তি, পাথর, বিভিন্ন প্রকার দামি তৈজসপত্র ও মুল্যবান সামগ্রী ছিল। রায়পুর জমিদার বাড়িতে বর্তমানে যেটুকু ধ্বংসাবশেষ ও প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে তা সংরক্ষনের জন্য সরকারি কোন উদ্যোগ বা পৃষ্ঠপোষকতা নেই। অথচ ওই মনোরম স্থানে গড়ে তোলা যেতে পারে মনোরম অবসাদ কেন্দ্র, পিকনিক স্পট। এতে অন্তত আগামী প্রজন্ম ঐতিহাসিক নিদর্শন রায়পুরের জমিদার বীরেন বাবুর জমিদারী ইতিহাস জানতে পারতো। অচিরেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে এক সময়ের প্রতাবশালী জমিদার বীরেন বাবুর ইতিহাস ও জমিদারীর স্মৃতিচিহ্ন।